মহাকাশের বাসিন্দা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১।তথ্য-প্রযুক্তিতে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

মোঃ রবিউল ইসলাম, তেরখাদা, খুলনা।
আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর পূর্বে মহাকাশে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এবার আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ১০ মে ২০১৮ বঙ্গবন্ধু -১ নামে বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।এর মধ্যে দিয়ে তথ্য প্রযুক্তি খাতে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ কি ?
         বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরী মহাকাশে উৎক্ষেপিত উপগ্রহ কে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট বলা হয়।এটি মানুষের তৈরী বলে একে কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়। উপগ্রহ যেমন গ্রহের চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিভ্রমন করে, ঠিক তেমনি কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট ও আমাদের পৃথিবী গ্রহের চারপাশে ঘোরে।এটি কৃত্রিমভাবে মানুষের তৈরী বলে একে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট বলে।

কি কাজ করে স্যাটেলাইট ?
      রেডিও, টিভি চ্যানেল, ফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশের ছবি তোলা, গভীর সমুদ্রে জাহাজের দিক নির্দেশনা, আবহাওয়ার পূর্বাভাশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস, পরিদর্শন পরিক্রমা, জিপিএস, ডিজিটাল ম্যাপ, মাটি ও পানির নিচে বিভিন্ন খনিজ সম্পদের অনুসন্ধ্যান উদ্ধার, পারমানবিক বিস্ফোরণ এবং হামলার আগাম সতর্কবার্তাসহ প্রায় ৪০ প্রকার কাজ করে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট।

কিভাবে কাজ করে ?
      স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকে। উপগ্রহ যেমন পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে, ঠিক তেমনি কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট ও পৃথিবী গ্রহের চারপাশে ঘোরে।
পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে। এ কারণে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট উপগ্রহ কে মহাকাশে চালানোর জন্য কোন জ্বালানি বা শক্তির প্রয়োজন হয় না। কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট এর মাইক্রোওয়েভের ইলেক্ট্রনিক সার্কিটগুলো চালানোর জন্য সোলার পাওয়ার ব্যবহৃত হয়।
পৃথিবী নিজ অক্ষ রেখায় ২৪ ঘন্টায় একবোর ঘুরে
আসে। কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কে যদি ঠিক ২৪ ঘন্টায় একবার  পৃথিবীকে ঘুরিয়ে আনা যায়, তাহলে পৃথিবী থেকে মনে হবে যে, সেটি আকাশের কোন এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। এ ধররে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কে জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বলে।পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে একে রাখতে হয়। যেহেতু, মহাকাশে বায়ুর অস্তিত্ব নেই, তাই এটি কোন বাধা ছাড়াই মহাকাশে পরিভ্রমণ করতে পারে।
          পৃথিবী থেকে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে স্যাটেলাইটে সিগন্যাল পাঠানো হয়। স্যাটেলাইট সেগুলো গ্রহণ করে এবং আম্পলিফাই করে পৃথিবীতে প্রেরণ করে। পৃথিবীতে অবস্থানকারী ডিশ এন্টেনাগুলো বা এই জাতীয় ডিভাইস সমূহ উক্ত সিগন্যাল রিসিভ করে তা ব্যবহারের জন্য প্রেরণ করে। রেডিও, টিভি, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি স্যাটেলাইটের সাহায্যে এই প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোন স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হয়?
          বাংলাদেশে রেডি, টিভি, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রযুক্তিতে বিদেশী স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হয়। আর এই বিদেশী স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য এর বিল বা ভাড়া বাবদ ঐ স্যাটেলাইটের মালিক প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট “বঙ্গবন্ধু-১”  উৎক্ষেপিত হলে এই অর্থ বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি এর থেকে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সম্ভাবনাও রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটঃ
     বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট “বঙ্গবন্ধু-১” উৎক্ষেপনের অপেক্ষায়।বাংলাদেশের মননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে সুইচ টিপে এ কার্যক্রমের উদ্ভোধনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইট টি উৎক্ষেপন করা হবে। বেসরকারী মহাকাশ অনুসন্ধ্যান ও প্রযুক্তি কোম্পানী “স্পেসএক্স” এর ফ্যালকন-৯ রকেট ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরাল লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশের উদ্দেশ্যে উড়াল দিবে।

     যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১০ মে) ৪টা ১২ মিনিটে মহাকাশে ডানা মেলবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। ইতিমধ্যেই ঢাকা থেকে ফ্লোরিডায় পৌঁছেছেন ৩০ সদস্যের বাংলাদেশ দল। যেখানে রয়েছেন  মাননীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম,  মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মাননীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ অন্যরা।

        বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। যার সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় সংকুলান হয়েছে।
      
        এর আগে ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের কথা থাকলেও হ্যারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় কেইপ কেনাভেরাল থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন বন্ধ হয়ে যায়।তারপর ৪ মে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেদিনও পিছিয়ে গিয়ে ৭ মে নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন কারণে ৭ মে ও পিছিয়ে যাওয়ায় ১০ মে নির্ধারণ করা হয়।
উল্লেখ্য ১৫ বছর মেয়াদে পাঠানো হচ্ছে “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১” । ১১৯ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় এর জন্য নির্ধারিত স্লটে পৌছাতে আট দিন সময় লাগবে।
এক নজরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানফ্যান্সের থ্যালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটি।
ওজন৩.৭ টন।
উৎক্ষেপন স্থলযুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড।
উৎক্ষেপন প্রক্রিয়াদুটি ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপে- লঞ্চ & অরবিট ফেইস (LEOP);
দ্বিতীয় ধাপে- স্যাটেলাইট ইন অরবিট টেস্ট।
LEOP ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন সময় লাগবে।
উৎক্ষেপনকারী প্রতিষ্ঠানযুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারী মহাকাশ অনুসন্ধ্যান ও প্রযুক্তি কোম্পানী “স্পেসএক্স”।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বহকারীরকেট: ফ্যালকন-৯
গন্তব্যউৎক্ষেপনস্থল থেকে মহাকাশে ৩৬ হাজার কিলোমিটার।
বাংলাদেশে গ্রাউন্ড স্টেশনগাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়ায়।
কক্ষপথ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট।
ট্রান্সপন্ডার সংখ্যামোট ৪০ টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। যার ২০ টি বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকি গুলো ভাড়া দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধূ স্যাটেলাইটের আওতায় আসবেসার্কভুক্ত ৮টি দেশসহ ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মায়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমিনিস্তান ও কাজাখস্তানের অংশবিশেষ।
নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিকবিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে।
তথ্য সূত্রঃ কারেন্ট নিউজ ম্যাগ্যাজিন, মে ২০১৮ ও ইন্টারনেট।

      বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপন হোক এবং অবসান হোক দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রতিক্ষার। তথ্য প্রযুক্তিতে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। এমনটাই প্রত্যাশা সকল বাংলাদেশী জনগণের।

আরো বিস্তারিত নিচের ভিডিও তে দেখুনঃ



মোঃ রবিউল ইসলাম
তেরখাদা, খুলনা।
CEO: MB TV24, Akotabd.com, Modern Bangla 24
Similar Videos

0 comments: